পুলিশ বাদী হয়ে যেসব মামলা করে, সেসব মামলা আদালতে কারা লড়ে?

পুলিশ বাদী হয়ে যেসব মামলা করে সেসব মামলা আদালতে কারা লড়ে

ব্যক্তির অধিকার ও সম্পত্তির অধিকার ব্যতিত যেকোনো অপরাধ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ব্যক্তির জীবন হরণ, অর্থসম্পদ লুটপাট ও যৌন হয়রানির অপরাধে ফৌজদারি মামলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। এক কথায় চুরি, ডাকাতি, খুন, জখম, প্রতারণা, দস্যুতা, লুটপাট, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, অপহরণ, বেআইনি সমাবেশ, যৌন হয়রানি, জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান প্রভৃতি অপরাধে যেসব মামলা দায়ের করা হয় তাকে ফৌজদারি মামলা বলা হয়। একটি ফোজদারী মামলা দুভাবে আদালতে বিচারের জন্য উপস্থাপিত হতে পারে।

এক- থানা ও বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা থেকে যে সব মামলা এফআইআর বা ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট বই ভুক্ত করে তদন্ত শেষে বিচারের জন্য ফৌজদারী আদালতে প্রেরণ করা হয়। এগুলো জিআর মামলা বা জেনারেল রেজিষ্টারভুক্ত মামলা।

দুই- ফৌজদারী কোর্টে “আরজি” পেশ করা হলে কোর্ট সরাসরি আমলে নিয়ে বিচার শুরু করেন। এগুলোকে বলে সিআর মামলা বা কোর্ট রেজিষ্টারভুক্ত মামলা।

সকল জিআর মামলা সেটার বাদী বা অভিযোগকারী পুলিশ হোক কিম্বা অন্য যে কোন ব্যক্তি হোক তা আদালতে তার পক্ষে রাষ্ট্র লড়েন। অর্থাৎ একটি জিআর মামলা রাষ্ট্র কর্তৃক নির্বাচীত আইনজীবি মামলাটি রাষ্ট্রের পক্ষে লড়বেন। মামলার বাদী বা অভিযোগকারী যেই হোন তার জন্য এই লার্নেড আইনজীবিকে রাষ্ট্র পেমেন্ট করবেন, বাদী বা অভিযোগকারীকে কোন পেমেন্ট করতে হবেনা। রাষ্ট্র্রের পক্ষে এই মামলাগুলি লড়া আইনজীবিদের নিম্ন আদালতে পিপি বা পাবলিক প্রসিকিউটর বলে। জিআর মামলা গুলি নিম্ন আদালতে পিপি বা তার পক্ষে সহকারী পিপিগণ লড়ে থাকেন। মহামান্য উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রের পক্ষে নিয়োগ প্রাপ্ত এই লার্নেড আইনজীবিকে এটর্নি জেনারেল বলে। এটর্নী জেনারেল রাষ্ট্র পক্ষের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা। সাধারণতঃ মামলাগুলো ঐ পর্যায়ে গেলে এটর্নি জেনারেলের পক্ষে সহকারী এট্রনি জেনারেলগণ লড়েন।

একজন জিআর মামলার বাদীকে মামলা করা থেকে শুরু করে বিচারের সর্বশেষ ধাপ পর্যন্ত মামলা পরিচালনা করতে কোন অর্থ খরচ করতে হয়না, বা উকিল নিয়োগ করতে হয় না।

আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন আশা করি। তবে আইন সক্রান্ত এসব প্রশ্নের উত্তরে একটি কথার সাথে অন্য আরো কথা চলে আসে। সেসব কথা অনেকের মনে নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়। আমি যখন উত্তর লিখি তখন বুঝি, কি কি নতুন প্রশ্নের চিন্তা পাঠকের মাথায় আসতে পারে? সেগুলোর উত্তর দিলে সে কথার পিঠেও নতুন প্রশ্নের জন্ম নেবে। সেগুলো এখানে লেখার মত ধৈর্য সঞ্চয় করতে পারলেও সব পাঠকের তা পড়ার নিশ্চই সময় হবে না। তবে কমেন্ট বক্স খোলা থাকলো, কারো এই উত্তরটি পড়ে মনে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে তা করতে পারেন, আমার উত্তর জানা থাকলে তা দিতে চেষ্টা করবো।

ভাল থাকুন। অপরাধ মুক্ত থাকুন। বিবাদ এড়িয়ে চলুন। ধন্যবাদ।

লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ এ প্রাক্তন অ্যাডিশনাল এসপি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *